ধানের সেচ ব্যবস্থাপনা

সুভাষ চন্দ্র দত্ত

উপ সহকারী কৃষি অফিসার

ধানের জাতের জীবনকাল এবং মাটির গঠনের ওপর সেচ প্রদানের প্রকৃতি নির্ভর করে ধানের জমি সারাক্ষণ পানিতে ভাসিয়ে টইটম্বুর করে রাখা ঠিক নয় পানি বেশি হলে বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগরোগের জীবাণু ছড়ায়গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল/ফল ঝড়ে পড়ে এবং দানা পুষ্ট হয় না, পরিশেষে  ফলন কম হয় আবার অন্যদিকে গাছে পানি কম হলে গাছের খাদ্য গ্রহণ বা পরিবহন ব্যাহত হয়, খাদ্য তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়, গাছ মারা যেতে পারেফুল-ফল দেরিতে আসেআগাছা বেশি হয় এবং দানা পুষ্ট হয় না ফলশ্রুতিতে ফলন কম হয়আমন ধান বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে, তাই সেচ তেমন প্রয়োজন হয় না তবে বোরো ধানের ক্ষেত্রে সেচ প্রদান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোনা আউশ ধান সাধারণত বৃষ্টির উপর নির্ভর করেই চাষ করা হয়। এই সময়ে বৃষ্টি না হলে সেচ দেওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার বিশেষ করে থোড় আসার সময় পানির অভাব হলে ফলন খুবকম হয়

ধান চাষে কখন কি পরিমাণ পানি রাখবেন :

. ধানের চারা লাগানোর সময় ছিপছিপে এক থেকে দেড় ইঞ্চি পানি লাগে, এর কম বা বেশি হলে রোপণে অসুবিধা হয়

. ধানের চারা লাগানো থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পানি জমিতে রাখতে হবে কারন, পানি কম হলে রোপণ ঝুঁকি সামলে উঠতে গাছের বেশি সময় লাগে আর পানি বেশি হলে চারা হেলে পড়ে

. ধানের চারা লাগানোর ১১ দিন পর থেকে থোড় আসা পর্যন্ত জমিতে এক থেকে দেড় ইঞ্চি পানি রাখতে হবে, এর কম বা বেশি হলে কুশি সংখ্যা কম হয় তবে মাঝে মাঝে জমি শুকায়ে হাল্কা ফাটল দিতে পারলে গাছ কষ্ট সহিষ্ণণু হয় ও গাছের ‍শিকড় বৃদ্ধি পায়।

. কাইচ থোড় হওয়ার সময় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত দুই থেকে চার ইঞ্চি পানি রাখতে হবে, সময় রসের ঘাটতি হলে দানাগঠন পুষ্ট হবে না, দানার সংখ্যা কমে যায় আবার পানি বেশি হলে গাছ দুর্বল হয়ে যেতে পারে

৫. দুধ আসার সময় জমিতে ১০ - ১৫ দিনের জন্য ৫ সে.মি পানি রাখতে হবে। 

৬. ধান পুষ্ট হওয়ার সময় জমিতে ১০ দিনের জন্য - সেমি পানি রাখতে হবে 

৭. ধানে দানা শক্ত ক্ষীর হলে অর্থাৎ ধান কাটার ১০-১২ দিন আগ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পানি বের করে দিতে হবে

 

সেচ প্রদানের মাধ্যমে পোকা, রোগ ও আগাছা দমন:

ধানের জমিতে সেচ প্রদানের মাধ্যমে শীষকাটা লেদা পোকা, থ্রিপস, ছাতরা পোকা, কাটুই পোকা, উড়চুঙ্গা দমন করা যায়, আর রোগের মধ্যে ব্লাস্ট, বাদামি দাগ রোগ, শিকড় গিঁট, উফরা রোগ দমন করা যায়। তাছাড়া, চারা পোড়া ও ঝলসানো রোগ হলে বীজতলা পানি দিয়ে ডুবিয়ে রাখলে রোগের প্রাদুর্ভাব কম হয়। আবার, অধিকাংশ আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য সেচ প্রদান করতে হয়।

 

পানি নিস্কাশন বা সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পোকা, রোগ ও আগাছা দমন:

অন্যদিকে নিষ্কাশন বা পানি সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অনেক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় যেমন- পাতা মাছি, চুংগি পোকা, বাদামি গাছফড়িং, সাদাপিঠ গাছফড়িং রোগের মধ্যে হলো গুড়িপঁচা রোগ, পাতার লালচে রেখা রোগ, খোলপোড়া রোগ, কান্ড পঁচা রোগ, পাতা পোড়া রোগ। আবার পানি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে অনেক আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায় যেমন- শেওলা, পানিকচু, কচুরিপানা বা চেচড়া

Comments