ধান গাছের টিকা/ ধানের স্তর
ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা
সুভাষ চন্দ্র দত্ত।
ধানের স্তর ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের রোগ ও ক্ষতিকর পোকামাকড়
দমন করা অনেকাংশে সম্ভব। এই ব্যবস্থাপনা গুলোকে এক কথায় ধানের টিকা বলা যেতে পারে।
এতে ধানের ফলন বাড়বে এবং ধানের ব্লাস্ট, খোলপোড়া, ও বিপিএইচ এর মতো মহামারি থেকে ধান
গাছকে খুব সহজে রক্ষা করা যাবে। আমরা জানি, ধান একটি এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে
ধানের জাতভেদে পরিবেশের উপর নির্ভর করে অংকুরোদগম থেকে পরিপক্কতা পর্যন্ত জীবনকাল ৯৫-১৬৫
দিন হয়ে থাকে। ধান গাছ বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিদ রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ হয়ে
থাকে। যদি ধান গাছ বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে এবং স্তরে কি ধরনের রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ
হয়, সে সর্ম্পকে অগ্রিম ব্যবস্থা নেয়া যায়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে ধান ফস কে রক্ষা
করা যাবে। তাই, ভাল ফলন পেতে হলে ধান গাছের প্রতিটি পর্যায় এবং স্তরে উপযুক্ত পদক্ষেপ
গ্রহণ করা উচিত।
ধানের জীবনকালকে প্রধাণত তিনটি কৃষিভিত্তিক পর্যায়ে (Phase) বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন:
১. দৈহিক বর্ধনশীল পর্যায় (Vegetative Phase)
২. প্রজনন পর্যায় (Reproductive
Phase) এবং ৩. পরিপক্ক বা পাকা পর্যায় (Ripening Phase)
দিন অনুসারে ধানের পর্যায়গুলোকে নিম্মলিখিতভাবে ভাগ করা হয়েছে।
মেয়াদ ভিত্তিক ধানের জাত |
দৈহিক বর্ধনশীল পর্যায় |
প্রজনন পর্যায় |
পরিপক্ক পর্যায় |
মোট মেয়াদ |
স্বল্প মেয়াদী জাত |
৩৫-৫৫ দিন |
৩৫ দিন |
৩০ দিন |
১০০-১২০ দিন |
মধ্যম মেয়াদী জাত |
৫৫-৭৫ দিন |
৩৫ দিন |
৩০ দিন |
১২০-১৪০ দিন |
দীর্ঘ মেয়াদী জাত |
৭৫-৯৫ দিন |
৩৫ দিন |
৩০ দিন |
১৪০-১৬০ দিন |
এই পর্যায় গুলো মূলতঃ তিনটি উৎপাদন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
যেমন: ১. প্রতি একক জমিতে কুশির সংখ্যা ২. প্রতি ছড়াই ধান উৎপাদনের গড় সংখ্যা
৩. প্রতিটি দানার গড় ওজন।
আবার, পর্যায় গুলোকে ষোলটি স্তরে (Stage) ভাগ
করা হয়েছে। নীচে ধান গাছের পর্যায় ও স্তরের বর্ণনা এবং স্তর ভিত্তিক কি ধরণের ব্যবস্থাপনা
গ্রহণ করতে হবে সে সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো:
১. দৈহিক বর্ধনশীল
পর্যায় (Vegetative Phase)
বীজ গজানো, কান্ড বাহির হওয়া এবং কাঁইচথোড় সৃষ্টির আগ পর্যন্ত সময়কে দৈহিক
বর্ধনশীল পর্যায় বলে। ধানের দৈহিক বর্ধনশীল পর্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কুশি বৃদ্ধি,
গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং নিয়মিত ব্যবধানে গাছের পাতা বৃদ্ধি। এই পর্যায়ে মূলত
গাছের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সময়কাল নির্ধারিত হয়।
ধান গাছের দৈহিক বর্ধনশীল পর্যায়কে ছয়টি স্তরে (Stage) ভাগ করা হয়েছে। যেমন:
ক. বীজ অংকুরোদগমন
(Seed Germination)
উপযুক্ত পরিবেশে বীজের সুপ্ত ও জীবন্তভ্রুণ থেকে যে নতুন অঙ্গ অঙ্কুরিত
ও বর্ধিত হয়ে একটি স্বাভাবিক উদ্ভিদ সৃষ্টির ইংগিত দেয় তাকে অংকুরোদগম স্তর বলে।
বীজ অংকুরোদগমন
স্তরে ব্যবস্থাপনা (Management of Seed Germination
Stage)
১. বীজ ভিজানোর পূর্বে একটু হাল্কা রোদে বীজ শুকায়ে নিন।
২. বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন। শকতরা ৮০ ভাগ বা ততোধিক বীজ
গজানো ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ নির্বাচন করুন।
৩. বীজ বাহিত রোগ যেমন- ব্লাষ্ট, বাকানী, বাদামী দাগ রোগ, খোলপঁচা রোগ,
পাতা ফোস্কা রোগ, ভূয়াঝুল, গোড়াপঁচা রোগ দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম, কার্বেন্ডাজিম
জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- নোইন ৫০ ডব্লিউপি/ ব্যাভিস্টিন ডিএফ/ গোল্ডাজিম ৫০০এসসি/ ভালকান
৫০ ডব্লিউপি, প্রভৃতি মিশিয়ে ভালভাবে ডুবিয়ে নাড়াচড়া করে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে বীজ
শোধন করুন। অতঃপর পরিষ্কার পানিতে বীজ গুলো ধুয়ে চটের বস্তায় ভিজিয়ে জাগ দিন।
খ. চারা উদগমন
(Seedling Emergence)
বীজ গজানোর পর থেকে সাধারণত ৫টি পাতা গজানো পর্যন্ত বা ধান গাছে কুশি
গজানোর আগ পর্যন্ত সময়কে চারা অবস্থা বলে। সাধারণত আউশ মৌসুমে ২০-২৫ দিন, রোপা আমন
মৌসুমে ২৫-৩০ দিন এবং বোরো মৌসুমে ৩৫-৪৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত।
চারা উদগমন স্তরের
ব্যবস্থাপনা (Management of
Seedling Emergence Stage)
১. ধানের চারা অবস্থায় ইউরিয়া সার ব্যবহার না করে পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট
সার ব্যবহার করুন। শতাংশ প্রতি ৫০০ গ্রাম এমওপি সার ও শুকনা ছাই ব্যবহার করুন।
২. বোরো মৌসুমের চারা ক্লোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করার জন্য রাতে চারার
উপর পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দিন অথবা, রাতে পানি দিয়ে সকালে বাহির করে দিন।
৩. ধানের উফরা, শিকড় গিঁট রোগ ও মাজরা পোকা দমনের জন্য বীজতলা থেকে চারা
উঠানোর ৫-৭ দিন পূর্বে বীজতলায় প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম হারে কার্বোফুরান গ্রুপের
কীটনাশক যেমন-ভিটাফুরান ৫জি/ অটোটাফ ৩জি/ রাজফুরান ৫জি প্রভৃতি ব্যবহার করুন।
গ. প্রাক কুশি
(Pre-Tillering)
বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ করার পরপরই গাছ দখল কাটিয়ে কুশি উৎপাদনের
জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই সময় প্রধান মূলটি আরো বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, মাধ্যমিক বা
পার্শ্বীয় মূলের বিকাশ ঘটে এবং গাছে নতুন পাতা জম্মায়। চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে
কোন চারা মারা গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণ করতে হয়, তাকে Seedlling
Recovary বলে।
প্রাক কুশি স্তরের
ব্যবস্থাপনা (Management of Pre-Tillering Stage)
১. ধান রোপণ/ বপনের ৩-৬ দিনের মধ্যে জমিতে ১-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা
অবস্থায় প্রি-ইমারজেন্স আগাছানাশক যেমন-রিফিট ৫০০ ইসি/ সুপারহিট ৫০০ ইসি/ ক্লিয়ার ৫০০
ইসি/ ম্যাচেটি ৫ জি ইত্যাদি প্রয়োগ করুন। জমিতে ১০-১২ দিন পর্যন্ত ছিপছিপে পানি ধরে
রাখুন।
২. চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে প্রথম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন।
ঘ. কুশি (Tillering)
কুশি স্তর সাধারণত পঞ্চম পাতার স্তর থেকে শুরু হয়। সাধারণত প্রথম কুশি
বাহির হওয়ার পর থেকে সর্বাধিক কুশি জম্মানোর সময়কালকে কুশি স্তর বলে। মূলতঃ তিন ধাপে
কুশি বের হয়। ১ম ধাপ (Primary tiller থেকে ২য় ধাপ (Secondary tiller) ২য় ধাপ থেকে ৩য় ধাপে (Tertiary tiller) কুশি বাহির হয়। ৩য় ধাপের পরে সাধারণতঃ কুশি আর বের হয়না এবং কিছু কিছু
কুশি মারাও যায়।
ঙ. সর্বোচ্চ কুশি
(Maximum Tillering)
সর্বাধিক সংখ্যক কুশিতে পৌঁছা পর্যন্ত একটি সিগমা আকৃতির বক্ররেখার মধ্যে
কুশির বৃদ্ধি ঘটে। এই মুহুর্তে, প্রধান কান্ড থেকে কুশি আলাদা করা কঠিন হতে পারে। বোনা
ধানের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় ১০-২০টি কুশি এবং রোপা ধানে প্রতি গোছায় ১০-৩০টি কুশি উৎপন্ন
হয়। এই সময় প্রতি বর্গমিটার জায়গায় সম্ভাব্য কি পরিমাণ কুশি উৎপাদিত হয়েছে তা নির্ধারণ
করা যায়।
সর্বোচ্চ কুশি
স্তরে ব্যবস্থাপনা (Management of Maximum Tillering Stage)
১. জমিতে আগাছা থাকলে এবং আগাছার পাতা ৩-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে তখন পোস্ট-ইমারজেন্স
আগাছা নাশক যেমন: ২-৪ ডি অ্যামাইন/ এমসিপিএ-৫০০ ইসি/ এগ্রোজন প্রভৃতি ব্যবহার করুন।
২. দ্বিতীয় মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন।
৩. ধান গাছের সর্বোচ্চ কুশি হতে দানা পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত বাদামি গাছফড়িং
আক্রমণ করে থাকে। বাদামি গাছ ফড়িং আক্রমণ করলে দমনের জন্য প্লেনাম ৫০ডব্লিউজি/ একতারা
২৫ডব্লিউজি/ মিপসিন ৭৫ডব্লিউপি/ এডমায়ার ২০ এসএল/ সানমেষ্টিন ১.৮ ইসি/ এসাটাফ ৭৫ এসপি/
প্লাটিনাম ২০ এসপি কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করুন।
চ. দৈহিক বর্ধনের
বিলম্বিত পর্যায় (Vegetative Lag-Phase)
এই সময় ধীর গতিতে গাছের উচ্চতা এবং কান্ডের ব্যাস বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং
গাছ প্রজনন পর্যায়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই সময় গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি ও
পূর্ণতা ঘটে।
দৈহিক বর্ধনের বিলম্বিত
পর্যায় ব্যবস্থাপনা (Management of Vegetative Lag-Phase Stage)
১. এ সময় মাজরা, গলমাছি, চুঙ্গী ও পামরি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে
নিয়মিত জমি পরির্দশন করুন। জমিতে পার্চিং দিন, আলোক ফাঁদ স্থাপন করুন এবং হাতজাল দিয়ে
পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন।
২. শিষকাটা লেদা পোকার আক্রমণ হতে পারে তাই, বিশেষ শর্তকতা অবলম্বন করুন।
প্রতি বর্গমিটারে ২-৫টি লেদা পোকা দেখা গেলে মনে রাখতে হবে এটি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস।
৩. ব্লাষ্ট ও খোলপোড়া রোগ দেখা দিলে এমিস্টার টপ/ ফিলিয়া ৫২৫ এসই/ নাটিভো
৭৫ ডব্লিউপি/ ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি প্রভৃতি ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করুন।
২. প্রজনন পর্যায়
(Reproductive
Phase)
গাছের কান্ড প্রসারণ, কুশির সংখ্যা হ্রাস, গাছের গর্ভাবস্থা, ঋষধম খবধভ
উদ্ভব, শীষ উদগমন ও ফুল আসার সময়কে প্রজনন পর্যায় বলে। সাধারণত গাছের কুশি বের হওয়া
শেষ হলেই এই পর্যায়টি আরম্ভ হয়। প্রজনন পর্যায়কে ছয়টি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
ক. কাঁইচথোড় (Panicle Initiation (PI))
গাছের ভেতর যখন থোড় সৃষ্টি হয় এবং খুব ছোট দানার মতো থাকে (বুট আকৃতি)
তখন তাকে কাঁইচথোড় বা চধহরপষব Panicle Initiation (PI) স্তর বলে। এই মুহুর্তে, কুশিটি সবুজ রিং অথবা নগ্ন চোখের মতো দেখায়।
কাঁইচথোড় থেকে শীষ উদগমন স্তর পর্যন্ত খুবই গুরুত্বর্পূণ সময়। কারণ এ সময় একটি শীষে
ধানের সংখ্যা এবং কতটি পুষ্ট হবে তা নির্ধারিত হয়ে থাকে। তখন পরিমিত সার ও পানির অভাব
হলে বা পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হলে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্ট ধানের
সংখ্যা কমে যায়। থোড় অবস্থায় ঠান্ডার প্রভাবে শীষ বাহির হতে পারে না। অতিরিক্ত ঠান্ডায়
কান্ডের অগ্রভাগের শেষ ওহঃবৎহড়ফব আংশিক বৃদ্ধি পায় বা মোটেই বৃদ্ধি পায় না।
কাঁইচথোড় স্তরের
ব্যবস্থাপনা (Management of Panicle Initiation Stage)
১. তৃতীয় মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করুন।
২. কোন রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিলে দ্বিতীয় মাত্রায় এমওপি সার ব্যবহার
করুন।
৩. ধান গাছে কোন পোকা কিংবা রোগ আক্রমণ করেছে কিনা ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন,
হলে দমনের ব্যবস্থা নিন।
খ. আন্তগীট সংশ্লেষণ
(Internode
Elongation (IE))
কাঁইচথোড় হওয়ার পর থেকে গাছের অভ্যন্তরে আন্তগীট সংশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়।
এই সময় গাছের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ উচ্চতায় পৌঁছায়।
গ. কাঁইচথোড় পৃথকীকরণ
(Panicle
Differentiation (PD))
Flag
Leaf কাঁইচথোড় থেকে আলাদা হওয়ার সময়কে কাঁইচথোড় পৃথকীকরণ
স্তর বলে। এই সময়ে, কাঁইচথোড় ১ থেকে ২ মিমি লম্বা এবং কাঁইচথোড়ের শাখাটি দৃশ্যমান হয়।
কাঁইচথোড় পৃথকীকরণ স্তরে ব্যবস্থাপনা (Management
of Panicle Differentiation Stage)-
এই সময় ধান গাছে কোনভাবে আঘাত লাগা উচিত নয়। প্রয়োজনে লগো পদ্ধতির মাধ্যমে
আন্তপরিচর্যা করা উত্তম কাজ।
ঘ. গর্ভাবস্থা
(Booting)
এই পর্যায়ে ভষধম ষবধভ-এর খোলটি ধীরে ধীরে ফুলে উঠে, থোড়ের আকার বড় হয়,
যার ফলে পাতাটির উপর হালকা ময়লা বেড়ে যায়। যখন ভষধম ষবধভ- টি সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত
হয়, কখন গর্ভাবস্থা দীর্ঘায়িত হয়। গর্ভাবস্থায় গাছের মিওসিস ঘটে। এই সময় পরিবেশের বিরুপ
প্রভাব থাকলে চাল উৎপাদন কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় ব্যবস্থাপনা
(Management of
Booting Stage)
এই বৃদ্ধি পর্যায়ে লক্ষীরগু/ ভূয়াঝুল বা ঋধষংব ংসঁঃ প্রতিরোধ করার জন্য
প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- টিল্ট ২৫০ ইসি/ এন্টি সিকা ২৫০ ইসি/ টাইড ২৫০
ইসি/ পটেন্ট ২৫০ ইসি/ প্রাউড ২৫ ইসি প্রভৃতি প্রয়োগ করুন।
ঙ. শীষ উদগমন (Heading)
এই সময় থোড় গর্ভাবস্থা থেকে বাহির হতে শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবে থোড় প্রসারিত
হতে দেখা যায়। একই জমিতে, একই জাতের, একই গাছের কুশির মধ্যে বৈচিত্র্যতার কারণে শীষ
উদগমন হতে ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। কৃষি তাত্ত্বিক ভাবে ৫০ ভাগ সম্পূর্ণ থোড়
বাহির হওয়া এবং ৫০ ভাগ আংশিক থোড় বাহির হওয়াকে শীষ উদগমন স্তর বলে।
শীষ উদগমন স্তরের
ব্যবস্থাপনা (Management
of Heading stage)
দিনের বেলায় গরম ও রাতে ঠান্ডা, শিশিরে ভেজা সকাল, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো
আবহাওয়া বিরাজ করলে নেক ব্লাষ্ট ও শীষ ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তখন- এমিস্টার
টপ/ ফিলিয়া ৫২৫ এসই/ নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি/ ট্রুপার প্রভৃতি ছত্রাকনাশক গাছ ভিজিয়ে স্প্রে
করুন।
চ. ফুল ফোঁটা/ পরাগায়ন
অবস্থা (Flowring/Anthesis)
শীষ বের হওয়ার পর পরই ধানের ফুল ফোঁটতে থাকে। ভাল আবহাওয়ায় সকাল ৯টা থেকে
১১টা পর্যন্ত অধিক সংখ্যক ফুল ফোঁটে। একটি থোড়ে সাধারণত ৪-৭ দিনের ব্যবধানে সম্পূর্ণভাবে
ফুল আসে।
ফুল ফোঁটা অবস্থায়
ব্যবস্থাপনা (Management
of Flowring/Anthesis Stage)
১. জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখুন।
২. বিশেষ কোন কারন ছাড়া জমিতে না নামাটাই উত্তম কাজ।
৩. পরিপক্ক বা পাকা
পর্যায় (Ripening Phase)
ফুলফোঁটার পর থেকে পাকা অবস্থা পর্যন্ত সময়কালকে পরিপক্ক বা পাকা পর্যায়
বলে। ধান পাকা পর্যারের সময়কাল সকল জাত ও মৌসুমে ৩০ দিন পর্যন্ত হয়। পরিপক্কতা পর্যায়কে
চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
ক. দুধ অবস্থা
(Milk stage)
এই পর্যায়ে, কার্ণেল নরম এবং কার্ণেলের অভ্যন্তরটি সাদা তরল অনুরূপ দুধ
দিয়ে ভরাট হয়। প্রথমে পানির মত থাকে পরে দুধের মত সাদা রং ধারণ করে।
দুধ অবস্থায় ব্যবস্থাপনা
(Management of
Milk stage)
এই সময় গান্ধি পোকার আক্রমণ হতে পারে, এই পোকা দমনের জন্য ইঁদুর, শামুক,
সাপ মেরে বিষ মেখে পুটলি বেঁধে ক্ষেতের মাঝখানে বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গীয়ে দিয়ে দুর্গন্ধ
সৃষ্টি করুন অথবা, ক্লোরোসিড/ কনভয় ২৫ইসি/ ফাইফানন ৫৭ইসি/ পারফেকথিয়ন ৪০ইসি স্প্রে
করুন।
খ. নরম মন্ড বা
ক্ষীর স্তর (Soft
dough stage)
ধানের ভেতর ক্রমাগত দুধ জমাট বাঁধতে থাকে। শস্যর মধ্যে মন্ড দৃঢ়
হতে শুরু করে কিন্তু ভিতরে তখনও নরম থাকে।
গ. শক্ত মন্ড
(Hard dough
stage
এই পর্যায়ে দানা ভরাট হয় এবং দানা শুকানো শেষ হয়। যখন সবগুলো দানা শক্ত
হয় তখন ধান কর্তনের জন্য প্রায়ই প্রস্তুত। তখন সমগ্র ফসলের আর্দ্রতা ২২ শতাংশের উপরে
থাকে।
ঘ. পরিপক্বতা (Maturity)
সর্ম্পূণ দানা গুলো শক্ত এবং ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত। এই পর্যায়ে ধান
প্রায় ২০ থেকে ২২ শতাংশ আর্দ্রতায় পৌঁছায়।
পরিপক্কতা স্তরের ব্যবস্থাপনা (Management of Maturity Stage)
অভিন্ন পরিপক্কতা মানেই ভাল মিলিং ব্যবস্থাপনা মূল চাবিকাঠি তাই, ধান
৮০% পর্যন্ত পরিপক্ক হলে ধান কর্তন করুন।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সুভাষ চন্দ্র দত্ত, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস ডবলমুরিং,
চট্টগ্রাম। ই-মেইল: subhashdutta777@gmail.com মোবাইল- 01815535571
Comments
Post a Comment