পেয়ারার ঢলে পড়া রোগ ও ব্যবস্থাপনা।

রোগের নামঃ

পেয়ারার ঢলে পড়া রোগ Wilt of Guava

রোগের কারণঃ

Fusarium spp নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

ক্ষতির ধরণ : রোগাক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা যেতে শুরু করে। ডগায় প্রথমে লক্ষণ দেখা দেয়। পরে পুরো ডাল একপাশ শেষে ১০-১৫ দিনের মধ্যে সম্পূন্ন গাছ ঢলে পড়ে। লাল মাটিতে লাগানো গাছে এ রোগ বেশী হয়।

ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : গাছের বাড়ন্ত পর্যায় , ফলের বাড়ন্ত পর্যায়

ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : কাণ্ড , পাতা , ফল

লক্ষণঃ

১. যে কোন বয়সের গাছে এ রোগ হতে পারে।

২.  রোগাক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে হলদে এবং পরে বাদামী রং ধারণ করে।

৩. গাছের শাখা প্রশাখা আগা থেকে শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ গাছটি মরে যায়।

৪. এ রোগটি মাটিবাহিত। শিকড় দিয়ে পানির সাথে খাদ্যবাহী নালি তথা গাছের রোগটি প্রবেশ করে।

৫. সংবেদনশীল জাত, বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা ও অধিক অম্লযুক্ত মাটি রোগের সহায়ক পরিবেশ হিসেবে কাজ করে।

৬. ডালের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে ঝরে যায়।

৭.  প্রথমে ডাল ও পরে আস্তে আস্তে পুরো গাছ মরে যায়।

৮.  আক্রান্ত গাছের শিকড় ও ডাল চিরে দেখলে ভিতর কালচে দেখায়।

৯.  রোগের কারণ পানিবাহী নালি বন্ধ হয়ে গাছটি পানির অভাবে ঢলে পড়ে।

 পূর্ব-প্রস্তুতি :

পেয়ারা বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাকনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন। নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন। মাটিতে ব্রসিকল প্রয়োগ করে এ রোগ প্রতিরোধ কর যায়।

প্রাথমিক ব্যবস্থাপনাঃ

১। আক্রান্ত গাছে সুষম মাত্রায় জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন।

২। নিয়মিত সেচ প্রদান করা।

৩। প্রথমিক লক্ষণ দেখা দিলে বোর্দো মিশ্রণ বা কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাক নাশক যেমন- কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। ।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ

১. আক্রান্ত গাছ গোড়া সহ তুলে পুড়ে ফেলা।

২. আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে জিপসাম অথবা চুন প্রয়োগ করা।

৩.  মাঠে/বাগানে সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।

৪. রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ১% বর্দোমিকচার বা কুপ্রাভিট (৪ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করা।

৫.  চারা রোপণের পূর্বে মুরগির বিষ্ঠা ৬-৭ কেজি হারে মাদায় দেয়া।

৬.  সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে ২০-২৫ দিন রাখা।

৭.  মাটি শুকালে ভালোভাবে নেড়ে ও ঢেলা ভেঙ্গে মিহি করে নেয়া।

৮. মাদায় রাসায়নিক সার অনুমোদিত হারে ব্যবহার করা। 

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

১. আক্রান্ত গাছে বোর্দো মিক্সচার প্রয়োগ করুন। বোর্দো মিক্সচার তৈরি- ১০ গ্রাম চুন, ১০ গ্রাম তুঁতে ৫০০ মিঃলিঃ পানিতে আলাদা আলাদা পাত্রে চুন ও তুঁতে মিশ্রণ করে একই সময়ে পানি পাত্রে ঢেলে বোর্দো মিক্সচার তৈরি করে ৫-৭ দিন পর পর গাছে ২/৩ বার স্প্রে করুন। অথবা,

২. আক্রান্ত গাছে কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্লু কপ-৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি/ কুপ্রাভিট -৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি/ সালকক্স-৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি/ ডিলাইট-৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি/ সানভিট-৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি/ বাইকপার-৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম/ লিটার পানি।

রোগ প্রতিরোধের জন্য :  

৩. রোগ প্রতিরোধের জন্য কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট- ৫০ ডব্লিউ পি, ২ গ্রাম / লিটার পানি/ ব্লু-কপ-৫০ ডব্লিউ পি, ২ গ্রাম / লিটার পানি/ বিলটক্স-৫০ ডব্লিউ পি, ২ গ্রাম / লিটার পানি/ সানভিট-৫০ ডব্লিউ পি, ২ গ্রাম / লিটার পানি/ সমগ্র বর্ষা মৌসুমে প্রতি মাসে একবার  এবং বছরে ২ বার করে স্প্রে করুন।


Comments

Post a Comment