ছাদ বাগান করার কিছু টিপস্
সুভাষ
চন্দ্র
দত্ত
উপ
সহকারী
কৃষি
অফিসার
মেট্রোপলিটন
কৃষি
অফিস,
ডবলমুরিং,
চট্টগ্রাম।
১. ছাদে বাগান করার আগে ছাদটি
বাগান করার উপযোগী কিনা ভালো ভাবে যাচাই করে ছাদ বাগান করতে হবে। ছাদে বাগান করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। তাই বিশেষায়িত প্রক্রিয়ায় ছাদ তৈরি করতে হবে।
২. টব/ড্রাম/ স্থায়ী বেডে গাছের জাত নির্বাচনের পরে যৌক্তিকভাবে গাছ সাজাতে হবে, যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর পাশে দিতে হবে। এতে আলো বাতাস রোদ ভালোভাবে পাবে। লম্বা গাছকে ছোট গাছের সামনে রাখতে হবে। তাছাড়া ছোট বড় জাতের মিশ্রণ করে সেটিং করলে গাছের বৃদ্ধিসহ বাড়তি ভালো হয়।
৩. ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে ফল চাষাবাদে কলম ও হাইব্রিড জাত ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
৪. ছাদ বাগান করার আগে ফরমালডিহাইড দিয়ে মাটি শোধন করলে রোগ ও পোকামাকড় থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। মাটি শোধনের নিয়ম হলো প্রতি লিটার পানির সাথে ১০০ মিলিলিটার ফরমালডিহাইড মিশিয়ে মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে ৩/৪ দিন ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তী ৩/৪ দিন পরে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের আলোর তাপে খুলে রাখতে হবে। ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে।
৫. রোপণের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভামিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দূরে দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। তাতে র্দীঘদিন ধরে গাছ পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে।
৬.টব/হাফড্রাম সার ও মাটি ভরাটের ১৫ দিন পর টব/হাফড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাঙ্খিত গাছটি রোপণ করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড়গুলো কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন ভেঙ্গে না যায়।
৭. খুব সাবধানতার সাথে টব/পটে/ড্রামে/স্থায়ীবেডে চারা/কলম লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণ মতো মাটির নিচে রোপণ করতে হবে। চারা বা কলমের সাথে লাগানো মাটির বল যেন না ভাঙ্গে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৮. বাজারে স্টিল (এস এস)/ লোহার ফ্রেম পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে অনায়াসে ছাদে বাগান করা যায়। বাঁশ/পিলার রড দিয়ে জাংলো বা মাচা বানিয়ে টব/প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ গাছালী, অর্কিড আবাদ করা যায়। এক্ষেত্রে ঝুলন্ত টব/পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার স্বদব্যবহার করলে, দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে।
৯. টব/হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে। কয়েকটি ভাঙা চাড়ি বা সুড়কি ছিদ্রের মুখে দিয়ে মাটি ভরতে হবে। তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করতে হবে। বর্ষার আগে আগে টবে চারা কলম লাগাতে হবে এবং বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরাতন মাটি বদলিয়ে দিতে হবে। এটি অক্টোবর মাসে করলে ভালো।
১০. চারা রোপণের পর গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। রোপিত গাছটিতে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
১১. ছাদ বাগানে মিশ্র সার, গুঁটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুঁড়া পঁচিয়ে ব্যবহার করতে হবে, তা না হলে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে। তবে জৈব সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভাল হয়।
১২. ইউরিয়া সার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ না করে, এক লিটার পানিতে এক চা-চামচ পরিমাণ ইউরিয়া সার গুলে ১০ দিন পর পর গাছের পাতায় (পলিয়ার) স্প্রে করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো
হয়।
১৩. প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
১৪. রোগাক্রান্ত গাছে মরা ডালগুলো ছাটাই করে কর্তিত স্থানে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে। (২৫০ গ্রাম তুঁতে (কপার সালফেট) ও ২৫০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে বর্দোপেষ্ট তৈরী করা যায়। এ পেস্ট তৈরির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশের মাধ্যমে ডালের কাঁটা অংশে প্রয়োগ করতে হবে।)
১৫. নিরাপদ শাক সবজি উৎপাদনের জন্য জৈব
বালাইনাশক কিংবা ভেষজ বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
১৬. পিএইচ মিটার দ্বারা মাটির পিএইচ পরীক্ষা
করে মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির পিএইচ ৫.৫ এর নিচে গেলে ডলোচুন/ ঝিনুকের
গুড়া ব্যবহার করে হবে, এবং মাটির পিএইচ ৭.৫ এর উপরে গেলে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার
প্রয়োগ করতে হবে। মাটির পিএইচ মান ৬ থাকলে ভালো তাতে অধিকাংশ গাছের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া
সহজতর হয় এবং গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ।
Comments
Post a Comment